অভ্যন্তরীণ শক্তি কাকে বলে – What is internal energy?

কোনো বস্তুর অভ্যন্তরীণ শক্তি মূলত দুটি উপাদানের সমষ্টি:

• গতিশক্তি: বস্তুকে গঠনকারী অণু বা পরমাণুগুলো কখনোই স্থির থাকে না। তারা কম্পন করে, ঘুরতে থাকে এবং একে অপরের সাপেক্ষে সরে চলে।
• এই গতির কারণে প্রতিটি কণার একটি নির্দিষ্ট গতিশক্তি থাকে। এই সকল কণার গতিশক্তির যোগফলই বস্তুর মোট গতিশক্তি।
• স্থিতিশক্তি: বস্তুর অণু বা পরমাণুগুলোর মধ্যে আকর্ষণ ও বিকর্ষণ বল ক্রিয়া করে। এই বলের কারণে অণুগুলোর মধ্যে একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় থাকে।
• এই দূরত্বকে পরিবর্তন করতে হলে কাজ করতে হয়। এই কাজের পরিমাণই স্থিতিশক্তি হিসেবে সংরক্ষিত থাকে।

উদাহরণ: একটি গ্যাসের ক্ষেত্রে, অণুগুলো খুব দ্রুত গতিতে এদিক-ওদিক ছুটে বেড়ায়।

এছাড়া, অণুগুলোর মধ্যে আকর্ষণ বলও কাজ করে। এই দুই উপাদান মিলে গ্যাসের অভ্যন্তরীণ শক্তি গঠন করে।

কোনো বস্তুর অভ্যন্তরীণ শক্তি পরিবর্তিত হতে পারে যখন:

• বস্তুতে তাপ দেওয়া হয়: তাপ দেওয়ার ফলে বস্তুর অণুগুলোর গতিশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং ফলে অভ্যন্তরীণ শক্তিও বৃদ্ধি পায়।
• বস্তুতে কাজ করা হয়: বস্তুতে কাজ করার ফলে বস্তুর অণুগুলোর স্থিতিশক্তি পরিবর্তিত হতে পারে এবং ফলে অভ্যন্তরীণ শক্তিও পরিবর্তিত হতে পারে।

উদাহরণ: যখন আমরা একটি পাত্রে জল গরম করি, তখন জলে তাপ দেওয়ার ফলে জলের অণুগুলোর গতিশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং ফলে জলের অভ্যন্তরীণ শক্তি বৃদ্ধি পায়।

আবার, যখন আমরা একটি গ্যাসকে সংকুচিত করি, তখন গ্যাসে কাজ করা হয় এবং ফলে গ্যাসের অণুগুলোর মধ্যকার দূরত্ব কমে যায়। ফলে গ্যাসের স্থিতিশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং অভ্যন্তরীণ শক্তিও বৃদ্ধি পায়।

অভ্যন্তরীণ শক্তির ধারণা তাপগতিবিদ্যা, রসায়ন, এবং পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

• তাপগতিবিদ্যা: তাপগতিবিদ্যার প্রথম সূত্র অনুযায়ী, কোনো বস্তুতে সরবরাহকৃত তাপ তার অভ্যন্তরীণ শক্তি বৃদ্ধি এবং বস্তু দ্বারা কৃত কাজের সমান।
• রসায়ন: রাসায়নিক বিক্রিয়ার সময় বিক্রিয়াকারী পদার্থের অভ্যন্তরীণ শক্তি পরিবর্তিত হয়। এই পরিবর্তনকে পরিমাপ করে বিক্রিয়ার তাপ পরিমাপ করা যায়।
• পদার্থবিজ্ঞান: পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন ঘটনা, যেমন তাপ পরিবহন, তরলের বাষ্পীভবন ইত্যাদি ব্যাখ্যা করতে অভ্যন্তরীণ শক্তির ধারণা ব্যবহৃত হয়।